❝ প্রশ্নোত্তরে আক্বীদাহ ও মানহাজ ❞
- AL-INABAH ACADEMY
- Jan 4, 2022
- 22 min read
Updated: Jan 5, 2022
➧ রচয়িতা: শাইখ 'আব্দুল 'আযীয বিন মুহাম্মাদ আশ-শা‘আলান (হাফিযাহুল্লাহ) ➧ সম্পাদনা-শাইখ ড.সালেহ বিন ফাওজান (হাফিজাহুল্লাহ) ➧অনুবাদ-মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ মৃধা (হাফিজাহুল্লাহ)
...…..…........ ▌অনুবাদকের কথা: ‘আমরা তখন টগবগে যুবক। থাকতাম নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। কুরআন শেখার আগে আমরা ইমান শিখে নিলাম। এরপর শেখলাম কুরআন। এতে আমাদের ইমান বেড়ে গেল।’ কথাগুলো বলেছেন সাহাবি জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু (ইবনু মাজাহ, হা/৬১)। উম্মাহর শ্রেষ্ঠ মানুষদের শেখার শুরুটা ছিল ইমান। ইমান, আক্বীদাহ, তাওহীদ—সকল শিক্ষার মূল। ব্যক্তি ইসলামের গণ্ডির মধ্যে আছে কিনা তা নিরূপিত হয় তার ইমান-আক্বীদাহর মাধ্যমে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজন্যই বলেছিলেন, ‘তোমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকে, আর তুমি ওই তাবৎ সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দাও, তবুও তিনি সেই দান কবুল করবেন না, যে পর্যন্ত না তুমি পূর্ণরূপে তাকদিরের প্রতি ইমান আনছ (ইবনু মাজাহ, হা/৭১)।’ মৌলিক বিশ্বাসে গলদ থাকলে, আর ইবাদতের মধ্যে শির্ক ঢুকলে পর্বততুল্য আমল করেও কাজ হবে না। সব হয়ে যাবে পণ্ড, নিস্ফল, ব্যর্থ (সুরা যুমার: ৬৫; ফুরকান: ২৩)। এজন্য নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রধান দাওয়াত ছিল আক্বীদাহ ও তাওহীদের দাওয়াত। রিসালাতের শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত ছিল স্রেফ তাওহীদ, তাওহীদ, আর তাওহীদ। সমরাঙ্গন থেকে মসজিদের দারস অবধি সবই ছিল তাওহীদে ভরপুর। তিনি মুআয বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়েমেনে পাঠাচ্ছেন সেখানকার প্রাদেশিক শাসনকর্তা হিসেবে। সেসময় নির্দেশ করছেন, ‘তুমি যাচ্ছ একটি কিতাবধারী সম্প্রদায়ের কাছে; সুতরাং সর্বপ্রথম তাদের প্রতি তোমার দাওয়াত যেন হয় আল্লাহর তাওহীদের (সহিহ বুখারি, হা/৪৩৪৭; সহিহ মুসলিম, হা/১৯)।’ আক্বীদাহ-মানহাজ শেখা এবং তা প্রচার করার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এ যে মুক্তিপ্রাপ্ত দলে থাকা-না-থাকার প্রশ্ন, ব্যক্তির মুসলিম থাকা-না-থাকার প্রশ্ন। তাই আহলুস সুন্নাহর মহান বিদ্বানগণ যুগে যুগে এ বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। সহজভাবে উপস্থাপন করার জন্য চালিয়েছেন নানামুখী প্রচেষ্টা। তারই ধারাবাহিকতায় শাইখ আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ আশ-শা‘আলানের একশ প্রশ্নোত্তর দিয়ে সাজানো অনিন্দ্য প্রয়াস—প্রশ্নোত্তরে আক্বীদাহ ও মানহাজ। পুস্তিকাটি সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিদ্বান ইমাম সালিহ আল-ফাওযানের ছোট্ট ভূমিকা ধারণ করে হয়েছে আরও গুরুত্ব দাবিদার। প্রশ্নোত্তরগুলো খুব সাধারণ; কিন্তু মৌলিক, বারবার পঠনীয়। অবশ্য পুস্তিকাটির অনেক আলোচনা ব্যাখ্যার মুখাপেক্ষী মনে হতে পারে। আর আসলেও ঘটনা তাই। তবুও আমরা টীকাটিপ্পনী দেওয়া থেকে সযত্নে বিরত থেকেছি। যেন পাঠকের স্বাভাবিক পাঠে বিঘ্নতা না আসে। বিস্তারিত জানার জন্য তো বড়ো বড়ো গ্রন্থ আর সেসবের ভাষ্য আছেই, তাইনা? মুসলিম ভাইবোনেরা এ থেকে উপকৃত হলে আমাদের সামান্য এই শ্রমকে সার্থক বলে মনে করব। দোয়া করি, আল্লাহ আমাদের সবাইকে পুস্তিকাটি থেকে উপকৃত করুন। আমীন।
· ▌ইমাম সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ প্রদত্ত অভিমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত। অতঃপর: শাইখ আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ আশ-শা‘আলানের লেখা প্রশ্নোত্তরগুলো আমি পড়েছি। তিনি প্রশ্নোত্তরের মধ্যে মুজাদ্দিদ ইমাম শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ প্রণীত ‘তিনটি মূলনীতি ও চারটি নীতি’ গ্রন্থের মৌলিক আলোচনা সন্নিবেশ করেছেন। এটাকে আমার বেশ ভালো ও ফলপ্রসূ কাজ মনে হয়েছে। এটা শাইখের এই মহান গ্রন্থ ভালোভাবে বুঝতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাঁকে উত্তম বিনিময় দিন এবং তাঁর জ্ঞান থেকে মানুষকে উপকৃত করুন। সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান সদস্য, সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ ২১শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪০ হি.
▌গ্রন্থকারের ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রসুলের প্রতি। অতঃপর: এই প্রশ্নোত্তরগুলো মহান আল্লাহর তাওহীদ, এর বিপরীত বিষয়—শির্ক ও তার বিভিন্ন মাধ্যম সম্পর্কে এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদাহ বিষয়ে রচিত। আমি এগুলো সংক্ষেপে রচনা করেছি। বিষয়গুলো যেন পাঠকের কাছে সহজে বোধগম্য হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেছি। আল্লাহর কাছে চাইছি, তিনি যেন এর মাধ্যমে উম্মতের উপকার করেন। --আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ আশ-শা‘আলান প্রধান, দাওয়াহ বিষয়ক কো-অপারেটিভ ব্যুরো, আযীযিয়্যাহ, রিয়াদ।
▌মূল গ্ৰন্থ ➧
১. আমরা কেন তাওহীদ পড়ব? উত্তর: কেননা তাওহীদ সকল মূলনীতির প্রধান মূলনীতি, শ্রেষ্ঠ মূলনীতি। তাওহীদের জন্যই আল্লাহ মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন, রসুলদের প্রেরণ করেছেন, ঐশী গ্রন্থরাজি অবতীর্ণ করেছেন। এর জন্যই সম্পন্ন হয়েছে জান্নাত ও জাহান্নামের পরিচালনা এবং মানুষরা বিভক্ত হয়েছে মুসলিম-কাফির—এ দুই শিবিরে। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ “আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল এ কারণে যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” [সুরা যারিয়াত: ৫৬] ২. আমরা আমাদের আক্বীদাহ কোথা থেকে গ্রহণ করব? উত্তর: কুরআন, সুন্নাহ এবং সালাফদের আদর্শ থেকে। ৩. ওই তিনটি মূলনীতি কী, যা জানা মানুষের ওপর ওয়াজিব এবং যে মূলনীতিগুলো সম্পর্কে সে কবরে জিজ্ঞাসিত হবে? উত্তর: বান্দা কর্তৃক তার রব, দ্বীন ও নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানা। ৪. তোমার রব কে? উত্তর: আমার রব আল্লাহ, যিনি তাঁর নেয়ামত দিয়ে আমাকে প্রতিপালন করেছেন এবং প্রতিপালন করেছেন সমগ্র জগৎকে। তিনি আমার মাবুদ (উপাস্য), তিনি ছাড়া আমার কোনো মাবুদ নেই। এর দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ “যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।” [সুরা ফাতিহা: ১] ৫. তুমি কীসের মাধ্যমে তোমার রবকে চিনেছ? উত্তর: তাঁর নিদর্শনাবলি ও সৃষ্টিরাজির মাধ্যমে। রাত, দিন, সূর্য, চন্দ্র প্রভৃতি তাঁর নিদর্শনাবলির অন্তর্ভুক্ত। সাত আকাশ, সাত জমিন, এসবের মধ্যে যা কিছু আছে, এবং এ দুয়ের মধ্যভাগে যা আছে তা তাঁর সৃষ্টিরাজির অন্তর্ভুক্ত। এর দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ “রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র তাঁর নিদর্শনগুলোর অন্তর্গত। সূর্যকে সেজদা কোরো না, চন্দ্রকেও না। সেজদা করো আল্লাহকে, যিনি ওগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। যদি সত্যিকারার্থে তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে চাও।” [সুরা ফুস্সিলাত: ৩৭] · ৬. আল্লাহ কোথায়? উত্তর: আকাশের ঊর্ধ্বে, আরশের ওপর সমুন্নত। ৭. আল্লাহ যে আকাশের ঊর্ধ্বে, আরশের ওপর আছেন—কুরআন থেকে তার দলিল দাও। উত্তর: তিনি আকাশের ঊর্ধ্বে আছেন, তার দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ “তোমরা কি তাঁর ব্যাপারে নিজেদের নিরাপদ মনে করে নিয়েছ, যিনি আছেন আকাশের ঊর্ধ্বে?” [সুরা মুলক: ১৬] তিনি আরশের ওপর আছেন, তার দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, الرَّحْمَٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ “দয়াময় আল্লাহ আরশের ওপর সমুন্নত হয়েছেন।” [সুরা তহা: ৫] এর দলিল কুরআনের মোট সাত জায়গায় আছে। ৮. আয়াতে উদ্ধৃত ‘ইস্তাওয়া (اسْتَوَىٰ)’ শব্দের অর্থ কী? উত্তর: উঁচু হয়েছেন, সমুন্নত হয়েছেন, আরোহণ করেছেন, ওপরে স্থায়ী হয়েছেন (َّعَلَا وَارْتَفَعَ وَصَعِدَ وَاسْتَقَر)। ৯. আল্লাহ কেন মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন? উত্তর: তাঁর ইদাবতের জন্য, যিনি এক ও অদ্বিতীয়। ১০. আল্লাহ মানুষ ও জিনকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন—কুরআন থেকে এ কথার দলিল দাও। উত্তর: মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ “আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল এ কারণে যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” [সুরা যারিয়াত: ৫৬] · ১১. আয়াতে উল্লিখিত ‘তারা আমারই ইবাদত করবে (ِيَعْبُدُونِ)’—কথাটির অর্থ কী? উত্তর: তারা আমার তাওহীদ বাস্তবায়ন করবে। ১২. ইবাদত কাকে বলে? উত্তর: আল্লাহ ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন, এমন যাবতীয় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজই ইবাদত। ১৩. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে সাক্ষ্যদানের অর্থ কী? উত্তর: এর মানে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই। ১৪. ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসুল’—এ সাক্ষ্যের দাবি কী? উত্তর: তাঁর নির্দেশ মান্য করা, তাঁর দেওয়া সংবাদকে সত্যায়ন করা, তাঁর নিষেধ ও বারণকৃত বিষয় পরিহার করা এবং তিনি যা শরিয়তসম্মত করেছেন—কেবল তারই আলোকে আল্লাহর ইবাদত করা। ১৫. মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড়ো নির্দেশ কী? উত্তর: মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড়ো নির্দেশ তাওহীদ—কেবল আল্লাহর ইবাদত করা, যাঁর কোনো শরিক নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ “আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছেই রসুল প্রেরণ করেছি (এ ঘোষণা দিয়ে যে), তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো।” [সুরা নাহল: ৩৬] · ১৬. তাওহীদের প্রকার কী কী? উত্তর: তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ, তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ, তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। ১৭. তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ কাকে বলে? উত্তর: আল্লাহকে তাঁর কর্মাবলির ক্ষেত্রে এক বলে মেনে নেওয়াকে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ বলে। যেমন: সৃষ্টি করা, রিজিক দেওয়া, বৃষ্টিবর্ষণ করা ইত্যাদি। ১৮. তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ কাকে বলে? উত্তর: আল্লাহ বান্দার জন্য যেসব কাজ ইবাদত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, বান্দাদের সেসব কাজে আল্লাহকে এক গণ্য করাকে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বলে। ১৯. তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত কাকে বলে? উত্তর: যেসব নাম ও গুণাবলি আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট, সেসবের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহকে এক হিসেবে মেনে নেওয়াকে বলা হয় তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। মহান আল্লাহ বলেছেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ “তাঁর সদৃশ (মতো) কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সুরা শুরা: ১১] ২০. ইবাদতের কিছু প্রকার উল্লেখ করো। উত্তর: দোয়া, বিপদে সহয়তা প্রার্থনা করা, সাহায্য প্রার্থনা করা, কুরবানি জবেহ করা (উৎসর্গ হিসেবে জবাই করা), মানত করা, ভয় করা, আশা করা, ভরসা করা, অন্তরের প্রত্যাবর্তন, ভালোবাসা, জ্ঞানগত ভয়, সন্তুষ্টি কামনা, ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া, রুকু করা, সেজদা করা, বিনয়ী হওয়া, অবনত হওয়া, জিকির করা, কুরআন পাঠ করা। · ২১. আল্লাহর সবচেয়ে বড়ো নিষেধ কী? উত্তর: আল্লাহর সবচেয়ে বড়ো নিষেধ শির্ক। আল্লাহর সাথে অন্যের ইবাদত করাকে শির্ক বলে। মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্য সব (গুনাহ) যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” [সুরা নিসা: ৪৮] ২২. শির্কের প্রকার দুটি কী কী? উত্তর: প্রথম প্রকার: শির্কে আকবার তথা বড়ো শির্ক। আল্লাহ ও তাঁর রসুল যে কাজকে শির্ক বলেছেন এবং উক্ত কাজের কাজিকে ইসলাম থেকে বের করে দিয়েছেন, তাকে বড়ো শির্ক বলে। যেমন প্রতিমাপূজা, মৃতদের ইবাদত করা, গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের) উদ্দেশ্যে সেজদা দেওয়া প্রভৃতি। দ্বিতীয় প্রকার: শির্কে আসগার তথা ছোটো শির্ক। শরিয়তে যে কাজকে শির্ক বলা হয়েছে এবং উক্ত কাজের কাজি ইসলাম থেকে বের হয় না, তাকে ছোটো শির্ক বলে। যেমন গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা, সামান্য লৌকিকতা (রিয়া), ‘আল্লাহ ও আপনি যা চেয়েছেন’ এরূপ মন্তব্য করা। এটাকে ছোটো শির্ক বলা হয়েছে, কারণ এটা বড়ো শির্কে পতিত হওয়ার একটি মাধ্যম। ২৩. মানবজাতির মধ্যে প্রথম শির্ক কখন সংঘটিত হয়? উত্তর: নুহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বপ্রথম শির্ক সংঘটিত হয়। ২৪. নুহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের মধ্যে শির্ক সংঘটনের কারণ কী ছিল? উত্তর: বুজুর্গদের নিয়ে বাড়াবাড়িই ছিল এর কারণ। ২৫. বুজুর্গদের নিয়ে বাড়াবাড়ি—কথাটির অর্থ কী? উত্তর: তাদের প্রশংসায় অতিরঞ্জন করা এবং তাদের মর্যাদাকে এত ওপরে তুলে দেওয়া যে, তাদের জন্য ধার্য করা হয় ইবাদতের কিয়দংশ। এর দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ “ওহে কিতাবধারীরা, তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না।” [সুরা নিসা: ১৭১] নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَا تُطْرُونِيْ كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ “তোমরা আমার প্রশংসায় অতিরঞ্জন কোরো না, যেমন মারইয়াম তনয় ঈসার প্রশংসায় অতিরঞ্জন করেছিল খ্রিষ্টানরা। আমি তো স্রেফ তাঁর বান্দা। সুতরাং তোমরা বল, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসুল।” [সহিহ বুখারি, হা/৩৪৪৫] · ২৬. মৃতদের কাছে প্রার্থনা করার বিধান কী? উত্তর: আল্লাহ ছাড়া যা করতে (বা দিতে) কেউ সক্ষম নয়, এমনকিছু মৃতদের কাছে প্রার্থনা করা বড়ো শির্ক, যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। কুরআন থেকে দলিল— وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহকেও ডাকে, এ ব্যাপারে তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই, কেবল তার প্রতিপালকের কাছেই তার হিসাব হবে; কাফিররা অবশ্যই সফলকাম হবে না।” [মুমিনুন: ১১৭] ২৭. আল্লাহর কাছে দোয়া করতে কি মাখলুককে মাধ্যম নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়? উত্তর: আল্লাহর কাছে দোয়া করতে মাখলুককে মাধ্যম নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয় না। এর দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ “যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, তখন (তাদের জবাব দাও), আমি তো (জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের) নিকটেই। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই।” [সুরা বাকারা: ১৮৬] ২৮. মৃতেরা কি প্রার্থনায় সাড়া দিতে পারে? উত্তর: মৃতেরা প্রার্থনায় সাড়া দিতে পারে না। এর দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ “তোমরা তাদেরকে (বাতিল উপাস্যদেরকে) ডাকলে, তারা তোমাদের ডাক শুনবে না। আর যদি শুনেও, তবুও তোমাদের ডাকে সাড়া দিতে পারবে না। আর তোমরা যে তাদেরকে (আল্লাহর) শরিক নির্ধারণ করতে, কেয়ামতের দিন তা তারা অস্বীকার করবে।” [সুরা ফাতির: ১৪] ২৯. আমরা কার উদ্দেশ্যে জবেহ করব এবং নামাজ পড়ব? উত্তর: এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে, যাঁর কোনো শরিক নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ “অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কুরবানি করো।” [সুরা কাওসার: ২] ৩০. গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে জবেহ ও সেজদা করার বিধান কী? উত্তর: বড়ো শির্ক, যা ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্ম থেকে বের করে দেয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ “বল, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ (সব কিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নেই, আমাকে এরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর আমিই (এ উম্মতের) সর্বপ্রথম মুসলিম।” [সুরা আনআম: ১৬২-১৬৩] · ৩১. গাইরুল্লাহর নামে শপথ করার বিধান কী? যেমন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে শপথ করা, কিংবা আমানত বা গৌরবের শপথ করা প্রভৃতির বিধান কী? উত্তর: এর বিধান—ছোটো শির্ক। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللهِ أَوْ لِيَصْمُتْ “যে ব্যক্তি শপথ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে, আর নাহয় নীরব থাকে।” [সহিহ বুখারি, হা/২৬৭৯] ৩২. আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ব্যাপারে একজন মুসলিমের কর্তব্য কী? উত্তর: কোনোরূপ তাহরীফ (অর্থ বা শব্দগত বিকৃতি), তা‘তীল (অস্বীকার, অপব্যাখ্যা, বা অর্থ-অস্বীকৃতি) না করে এবং ধরন ও সাদৃশ্য বর্ণনা না করে—আল্লাহর জন্য তিনি নিজে যেসব নাম ও গুণ সাব্যস্ত করেছেন এবং তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা সাব্যস্ত করেছেন তা সাব্যস্ত করা; আর আল্লাহর তরফ থেকে তিনি নিজে যে গুণ নাকচ করেছেন এবং তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নাকচ করেছেন তা নাকচ করা। ৩৩. আল্লাহর গুণাবলি যে আমাদের গুণাবলির মতো নয়, কুরআন থেকে তার দলিল দাও। উত্তর: মহান আল্লাহ বলেছেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ “তাঁর সদৃশ (মতো) কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সুরা শুরা: ১১] ৩৪. তোমার দ্বীন (ধর্ম) কী? উত্তর: আমার দ্বীন ইসলাম। কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন—ইসলাম।” [সুরা আলে ইমরান: ১৯] ৩৫. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতপ্রাপ্তির পর ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম কি আল্লাহ গ্রহণ করবেন? উত্তর: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতপ্রাপ্তির পর ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। এর দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ “আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করতে চাইবে, কক্ষনো তার সেই ধর্ম কবুল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সুরা আলে ইমরান: ৮৫] · ৩৬. ইসলামের পরিচয় কী? উত্তর: তাওহীদ সহকারে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য নিয়ে তাঁর অনুসরণ করা এবং শির্ক ও মুশরিকদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে বলে ইসলাম। ৩৭. ইসলামের স্তম্ভ (খুঁটি) কী কী? উত্তর: এ মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসুল, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা (যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা), জাকাত প্রদান করা, রমজান মাসের রোজা রাখা এবং সামর্থ্য থাকলে বাইতুল্লাহর হজ সম্পন্ন করা। এর দলিল—নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلا “ইসলাম মানে—তুমি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসুল, তুমি নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে (যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে), জাকাত প্রদান করবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে এবং সামর্থ্য থাকলে বাইতুল্লাহর হজ করবে।” [সহিহ বুখারি, হা/৫০; সহিহ মুসলিম, হা/৮] ৩৮. ইমানের পরিচয় কী? উত্তর: জবান দিয়ে বলা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে আমল করাকে একত্রে ইমান বলা হয়। আনুগত্যমূলক কাজে ইমান বৃদ্ধি পায়, আর পাপকাজের দরুন তা কমে যায়। ৩৯. ইমানের স্তম্ভ (খুঁটি) কী কী? উত্তর: আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাবর্গ, কিতাবসমূহ ও রসুলবর্গের প্রতি ইমান আনয়ন করা এবং শেষ দিবসের প্রতি ও ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি ইমান আনা। এর দলিল—রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ “ইমান মানে—তুমি ইমান আনবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাবর্গ, কিতাবসমূহ ও রসুলবর্গের প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি; আরও ইমান আনবে ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি।” [সহিহ মুসলিম, হা/৮; ইমান অধ্যায় (১); পরিচ্ছেদ: ১] ৪০. ফেরেশতা কারা? উত্তর: ফেরেশতাবর্গ একটি অদৃশ্য জগৎ, যাদেরকে আল্লাহ তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। · ৪১. ফেরেশতাবর্গের প্রতি ইমান আনার বিধান কী? উত্তর: ফরজ, যা ব্যতীত ব্যক্তির ইমান কবুল করা হয় না। ৪২. সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা কে? উত্তর: জিবরিল আলাইহিস সালাম। তিনি ওহি নিয়ে আসার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা। ৪৩. আসমানী কিতাব কী কী? উত্তর: যেসব কিতাব আল্লাহ তাঁর রসুলগণের ওপর নাজিল করেছেন। যেমন: তাওরাত, ইনজীল, যাবুর, কুরআন। ৪৪. কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনার বিধান কী? উত্তর: ফরজ, যা ব্যতীত ব্যক্তির ইমান কবুল করা হয় না। ৪৫. সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব কী? উত্তর: সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব মহান কুরআন, যা আল্লাহ নাজিল করেছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর। কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী গ্রন্থকে রহিতকারী। কুরআন ব্যতীত অন্য কিছুর মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা জায়েজ নয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ “আর আমি সত্য বিধান-সহ তোমার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি, যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহকে সত্যায়নকারী ও সংরক্ষক।” [সুরা মাইদাহ: ৪৮] · ৪৬. শেষ দিবস কী? উত্তর: কেয়ামতের দিন, যেদিন হিসাব ও প্রতিফলের জন্য মানুষকে উঠানো হবে। ৪৭. শেষ দিবসের প্রতি ইমান আনার বিধান কী? উত্তর: ফরজ, যা ব্যতীত ব্যক্তির ইমান কবুল করা হয় না। ৪৮. ভাগ্য (তাকদির) কী? উত্তর: আল্লাহর অগ্রবর্তী ইলম ও প্রজ্ঞার দাবি অনুযায়ী তিনি সৃষ্টিকুলের জন্য যে নিয়তি নির্ধারণ করেছেন, সেটাই ভাগ্য (তাকদির)। ৪৯. ভাগ্যের প্রতি ইমান আনার বিধান কী? উত্তর: ফরজ, যা ব্যতীত ব্যক্তির ইমান কবুল করা হয় না। ৫০. ইহসান কাকে বলে? উত্তর: ইহসান মানে—তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাকে দেখছ; তুমি যদি তাকে দেখতে না পাও, (তাহলে এ ভেবে ইবাদত করো যে) তিনি তোমাকে দেখছেন। ৫১. রিয়া (লৌকিকতা) কাকে বলে? উত্তর: মানুষ দেখবে এবং প্রশংসা করবে—এ উদ্দেশ্যে ইবাদত করাকে রিয়া বলা হয়। ৫২. রিয়ার বিধান কী? উত্তর: রিয়া করা হারাম। এটা ছোটো শির্কের পর্যায়ভুক্ত। দলিল—নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, أَخْوَفُ مَا أَخَافُ عَلَيْكُم : الشِّرْكُ الأَصْعَر، فَسُئِلَ عَنْهُ فَقَالَ: الرِّيَاء “আমি ছোটো শির্ককে তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয় করি।” তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, “এটা রিয়া (লোক-দেখানো ইবাদত)।” [আহমাদ, ৫/৪২৮; সিলসিলা সহিহাহ, হা/৯৫১; সনদ: সহিহ (তাহকিক: আলবানি)] ৫৩. তোমার নবি কে? উত্তর: আমার নবি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম। হাশিম এসেছে কুরাইশ থেকে, কুরাইশ এসেছে কিনানাহ থেকে, কিনানাহ এসেছে আরব থেকে, আর আরব এসেছে ইসমাইলের সন্তানদের থেকে, আর ইসমাইল হলেন ইবরাহিম আলাহিস সালামের পুত্র। ৫৪. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের সবচেয়ে বড়ো নিদর্শন (দলিল) কী? উত্তর: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের সবচেয়ে বড়ো নিদর্শন মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। এটা আল্লাহর কথা এবং এটাই সঠিক পথের দিশা, রোগের প্রতিকার ও নুর (আলো)। মহান আল্লাহ বলেছেন, قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَىٰ أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَٰذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا “বল, এ কুরআনের মতো একটি কুরআন আনার জন্য যদি সমগ্র মানবজাতি আর জিন একত্রিত হয়, তবুও তারা তার মতো আনতে পারবে না; যদিও তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে।” [সুরা ইসরা/বানি ইসরাইল: ৮৮] ৫৫. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে বড়ো অধিকার কী কী? উত্তর: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে বড়ো অধিকারগুলো হচ্ছে—তাঁর প্রতি সত্যিকারের ইমান আনা, এ ইমান রাখা যে, আল্লাহ তাঁকে পুরো মানবজাতি ও জিনদের কাছে পাঠিয়েছেন এবং তাঁর আনুগত্য করা ও তাঁর নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা, তাঁর আদর্শকে সম্মান করা; পরিবারপরিজন, সন্তানসন্ততি ও সমগ্র মানবজাতির চেয়ে তাঁকে বেশি ভালোবাসা, তাঁকে মর্যাদা দেওয়া, সম্মান করা, তাঁর ওপর দরুদ পাঠ করা, তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করা এবং আল্লাহ তাঁকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তার চেয়ে বেশি মর্যাদায় তাঁকে উন্নীত না করা প্রভৃতির সবই তাঁর অধিকার। · ৫৬. জাদু কী? উত্তর: জাদু এক ধরনের শয়তানি কর্ম, যা সত্যিই সৃষ্টিজীবের অন্তরে ও শরীরে প্রভাব ফেলে। চোখে প্রভাব ফেলে, অথচ তার বাস্তবতা নেই—এমন খেয়াল দেখানো কর্মকাণ্ডও জাদুর অন্তর্ভুক্ত। ৫৭. গণকবৃত্তি বা ভাগ্য গণনা কাকে বলে? উত্তর: জিনদের ব্যবহার করে ইলমুল গায়েব তথা অদৃশ্যের জ্ঞান জানার দাবিকে গণকবৃত্তি বা ভাগ্য গণনা বলে। ৫৮. জ্যোতিষী (الْعَرَّاف) কাকে বলে? উত্তর: যে লোক এমন কতিপয় ভূমিকার মাধ্যমে গায়েবি বিষয় জানার দাবি করে, যেসব দিয়ে সে চুরি যাওয়া বস্তু ও হারানো বস্তু কোথায় পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে নির্দেশনা লাভ করে, তাকে জ্যোতিষী বলে। কেউ বলেন, গণক, তারকা দেখে ভবিষ্যদ্বাণীকারী, বালিতে রেখা টেনে ভবিষ্যদ্বাণীকারী প্রমুখ, যারা কিনা জিনের মাধ্যমে গায়েবি বিষয় জানার দাবি করে, তাদের সবাইকে জ্যোতিষী বলে। তাদের কার্যক্রম: তারকাগণনা (Astrology), হস্তরেখাপাঠ (Palmistry), পেয়ালাপাঠ (Cup Reading) এবং এসবের মাধ্যমে গায়েবি বিষয়ের নির্দেশনা লাভ করা। ৫৯. জোতিষী ও গণক প্রমুখের কাছে গমনের হুকুম কী, যারা ইলমুল গায়েব তথা অদৃশ্যের জ্ঞান জানার দাবি করে? উত্তর: জাদুকর, জ্যোতিষী ও গণকের কাছে যাওয়া হারাম। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً “যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর কাছে যায়, অতঃপর তাকে কোনো বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করে, চল্লিশ দিন অবধি তার নামাজ কবুল করা হয় না।” [সহিহ মুসলিম, হা/২২৩০; সালাম অধ্যায় (৪০); পরিচ্ছেদ: ৩৫] আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ أَتَى كَاهِنًا أَوْ عَرَّافًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ “যে ব্যক্তি কোনো জ্যোতিষী বা গণকের কাছে যায় এবং তার বক্তব্যকে সত্যায়ন করে, সে মুহাম্মাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি কুফরি (অস্বীকার/অবিশ্বাস) করে।” [আহমাদ, হা/৯৫৩৬; সহিহুল জামি, হা/৫৯৩৯; সনদ: সহিহ (তাহকিক: আলবানি)] ৬০. জাদু করা এবং তা শেখার বিধান কী? উত্তর: জাদুর সবই হারাম ও কুফর; শেখা-শেখানো উভয়ই হারাম ও কুফর। জাদুর কোনো কিছুই বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ “সুলাইমান কুফরি করেনি, বরং শয়তানরাই কুফরি করেছিল, তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।” [সুরা বাকারা: ১০২] · ৬১. রাশিফল পাঠ করা এবং তাতে বিশ্বাস করার বিধান কী? উত্তর: এটা জাহেলি যুগের লোকদের কাজ। জ্যোতিষী ও গণকরা যে অদৃশ্যের জ্ঞান জানার দাবি করে, তাতে তাদেরকে সত্যায়ন করার অন্তর্ভুক্ত হবে—এই রাশিফল পাঠ ও তাতে বিশ্বাস করা। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ، اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ زَادَ مَا زَاد “যে ব্যক্তি তারকা গণনার একটি অংশ গ্রহণ করল, সে যেন জাদুরই একটি অংশ গ্রহণ করল। যে যত বেশি গ্রহণ করবে, তার ততই বেশি হবে (পাপ কিংবা জাদুর অংশ)।” [আবু দাউদ, হা/৩৯০৫; সনদ: হাসান (তাহকিক: আলবানি)] ৬২. তাবিজ-কবচ (التَّمَائِم) কাকে বলে? উত্তর: আরবি ‘তামাইম’ শব্দটি ‘তামিমাহ’ শব্দের বহুবচন। বিপদ ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা অথবা বিপদ ঘটার পরে তার প্রতিকার করার উদ্দেশ্যে যেসব পুঁতি, অস্থি (হাড়), লিখিত বস্তু, ফিতা, সুতো, বা বস্ত্রখণ্ড—শিশুদের গলায়, বা বাজুতে, কিংবা বাড়িতে, বা গাড়িতে লটকানো হয়, সেগুলোই তামাইম তথা তাবিজ-কবচ। ৬৩. তাবিজ-কবচের বিধান কী? উত্তর: ছোটো শির্ক। তবে তা বড়ো শির্কও হতে পারে, যদি কেউ এ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহকে ব্যতিরেকে তাবিজ-কবচ (সৃষ্টির) উপকার ও ক্ষতি করতে পারে। এর দলিল—নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ “যে তাবিজ লটকাল, সে শির্ক করল।” [আহমাদ, হা/১৭৪২২; সিলসিলাহ সহিহাহ, হা/৪৯২; সনদ: সহিহ (তাহকিক: আলবানি)] ৬৪. শরয়ী ঝাঁড়ফুক কী এবং এর বিধান কী? উত্তর: রোগীর কাছে কুরআনের কোনো অংশ বা দোয়া পাঠ করা এবং ব্যথার স্থানে হালকা থুতুমিশ্রিত ফুঁ দেওয়া। ঝাঁড়ফুক করা বৈধ। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لاَ بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ “শির্ক না থাকলে ঝাঁড়ফুক করায় কোনো সমস্যা নেই।” [সহিহ মুসলিম, হা/২২০০; সালাম অধ্যায় (৪০); পরিচ্ছেদ: ২২] ঝাঁড়ফুক হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে—তা শির্কমুক্ত হতে হবে, এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, ঝাঁড়ফুক নিজে নিজেই কাজ করে না, বরং তা স্রেফ মাধ্যম মাত্র, ভালো-মন্দ মহান আল্লাহর হাতে। এছাড়াও ঝাঁড়ফুক হতে হবে আরবি ভাষায়, কিংবা অন্য ভাষায় হলে তার অর্থ বোধগম্য হতে হবে এবং তা হতে হবে আল্লাহর বাণী, নাম ও গুণাবলি সংবলিত। ৬৫. অশুভ লক্ষণ মানা (الطِّيَرَة) বলতে কী বোঝায়? উত্তর: পাখি উড়িয়ে শুভ বা অশুভ ধারণা করাকে অশুভ লক্ষণ মানা বলে। · ৬৬. দলিল-সহ অশুভ লক্ষণ মানার বিধান বর্ণনা করো। উত্তর: এ কাজ হারাম এবং তা ছোটো শির্কের অন্তর্ভুক্ত। তবে তা বড়ো শির্কও হতে পারে, যদি কেউ এ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহকে ব্যতিরেকে অশুভ লক্ষণ (কারও) উপকার ও ক্ষতি করতে পারে। এর দলিল—নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, الطِّيَرَةُ شِرْكٌ “অশুভ লক্ষণ মানা শির্ক।” [আহমাদ, ১/৩৮৯; আবু দাউদ, হা/৩৯১০; সনদ: সহিহ (তাহকিক: আলবানি)] ৬৭. পাখি না উড়িয়েও কি অশুভ লক্ষণ মানা হয়? উত্তর: হ্যাঁ, মানা হয়। যেমন মাস বা দিবস, বা জীবজন্তুর মাধ্যমে অশুভ লক্ষণ মানা; কিংবা বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের মাধ্যমে অশুভ লক্ষণ মানা, যেমন অন্ধ, খোঁড়া প্রমুখ। ৬৮. নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টিপ্রার্থনা (الْاِسْتِسْقَاءُ بِالأَنْوَاء) বলতে কী বোঝায়? উত্তর: আরবি ‘আনওয়া (الأَنْوَاء)’ মানে নক্ষত্ররাজি। নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টিপ্রার্থনা মানে নক্ষত্রের কাছে বৃষ্টি কামনা করা এবং বৃষ্টি বর্ষিত হলে বৃষ্টিকে নক্ষত্রের দিকে সম্পৃক্ত করা। ৬৯. নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টিপ্রার্থনার বিধান কী? উত্তর: এর বিধান দু ধরনের। যথা: এক. এ বিশ্বাস রাখা যে, নক্ষত্রই বৃষ্টিবর্ষণ করে। এটা কুফর। কেননা এতে আল্লাহর সাথে শরিক স্থাপন করা হয়। দুই. এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহই বৃষ্টির স্রষ্টা এবং তিনিই বৃষ্টিবর্ষণ করেন। কিন্তু ব্যক্তি এরকম বিশ্বাস রাখে যে, নক্ষত্ররাজি বৃষ্টিবর্ষণের মাধ্যম। এটা ছোটো শির্ক। যেহেতু এতে আল্লাহর নেয়ামতকে অন্যের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়। কারণ আল্লাহ নক্ষত্ররাজিকে বৃষ্টিবর্ষণের মাধ্যম বানাননি। ৭০. নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টিপ্রার্থনা হারাম হওয়ার দলিল কী? উত্তর: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, মহান আল্লাহ বলেছেন, فَأَمَّا مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي وَمُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَب “যে বলে, ‘আমরা আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পায় বৃষ্টি পেয়েছি,’ সে আমার প্রতি ইমান রাখে, আর নক্ষত্রকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে যে বলে, ‘আমরা অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টি পেয়েছি,’ সে আমাকে অস্বীকার করে, আর নক্ষত্রের প্রতি ইমান রাখে।” [সহিহ বুখারি, হা/৮৪৬; সহিহ মুসলিম, হা/৭১] · ৭১. কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণের বিধান কী? উত্তর: হারাম। এটা শির্কের একটি মাধ্যম। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْيَهُوْدِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ “ইহুদি-খ্রিষ্টানদের আল্লাহ স্বীয় রহমত থেকে বিতাড়িত করুন। তারা নবিদের কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করেছে।” [সহিহ বুখারি, হা/৩৪৫৩ ও ৩৪৫৪] ৭২. তাবাররুক কাকে বলে? উত্তর: তাবাররুক মানে বরকত কামনা করা। কল্যাণ পাওয়া এবং সেই কল্যাণ স্থায়ী হওয়াকে বলা হয় বরকত। ৭৩. তাবাররুকের প্রকার কী কী? উত্তর: তাবাররুক দু প্রকার। এক. সিদ্ধ বরকত-কামনা: এটা জায়েজ। এটা সেই বরকত-কামনা, যে ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর দলিল সাব্যস্ত হয়েছে। দুই. নিষিদ্ধ বরকত-কামনা: যে বরকত-কামনা করা হারাম। ৭৪. সিদ্ধ বরকত-কামনা কয় প্রকার? উত্তর: সিদ্ধ বরকত-কামনা দু প্রকার। যথা: (১) ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য জড়পদার্থের মাধ্যমে বরকত কামনা করা। যেমন জমজম কূপের পানি দিয়ে বরকত কামনা করা। (২) ভালো কর্মাবলির মাধ্যমে বরকত কামনা করা। যেমন নামাজ, দোয়া, দান-খয়রাত ইত্যাদি। ৭৫. নিষিদ্ধ বরকত-কামনা কয় প্রকার? উত্তর: নিষিদ্ধ বরকত-কামনা দু প্রকার। যথা: (১) যা থেকে শরিয়ত নিষেধ করেছে। যেমন: প্রতিমা ও মূর্তি দিয়ে বরকত-কামনা করা। (২) যা বাস্তবতাশূন্য ধারণামূলক মাধ্যমের অন্তর্ভুক্ত। যেমন: সৎ ব্যক্তিদের মাধ্যমে, অথবা তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, মুখের লালা, কিংবা গাছপালা, বা পাথরের মাধ্যমে বরকত-কামনা করা। · ৭৬. দোয়ায় অসিলা গ্রহণ করার (التًَّّوَسُّل) প্রকার কী কী? উত্তর: দোয়ায় অসিলা গ্রহণ করা দু ধরনের। যথা: এক. সিদ্ধ অসিলা গ্রহণ: যে অসিলা গ্রহণের ব্যাপারে শরয়ী দলিল সাব্যস্ত হয়েছে। দুই. নিষিদ্ধ অসিলা গ্রহণ: যে অসিলা গ্রহণের ব্যাপারে শরয়ী দলিল সাব্যস্ত হয়নি, কিংবা শরয়ী দলিল তা থেকে সরাসরি নিষেধ করেছে। ৭৭. দোয়ায় সিদ্ধ অসিলা গ্রহণের প্রকার কী কী? উত্তর: দোয়ায় সিদ্ধ অসিলা গ্রহণ তিন প্রকার। যথা: (১) আল্লাহর নাম ও গুণাবলিকে অসিলা হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন আপনার এরূপ বলা যে, ‘হে রহমান, হে দয়াময়, আমাকে দয়া করুন।’ (২) ভালো আমলকে অসিলা হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন আল্লাহ বলেছেন, رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ “(আল্লাহভীরু বান্দারা প্রার্থনা করে) হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা ইমান এনেছি, অতএব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।” [সুরা আলে ইমরান: ১৬] (৩) জীবিত ও উপস্থিত আছেন, এমন সৎব্যক্তির কাছে দোয়া চেয়ে অসিলা গ্রহণ করা। যেমন উক্কাশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চেয়েছিলেন, তিনি যেন তাঁর জন্য দোয়া করে দেন, যাতে তিনি বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে—এমন সত্তর হাজার লোকের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। উক্কাশাহ বিন মিহসান বলেছিলেন, ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ “আল্লাহর কাছে দোয়া করে দিন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।” আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, أَنْتَ مِنْهُمْ “তুমি তাদের একজন।” [সহিহ বুখারি, হা/৪১২] ৭৮. দোয়ায় নিষিদ্ধ অসিলা গ্রহণের প্রকার কী কী? উত্তর: দু প্রকার। যথা: (১) শির্কি অসিলা গ্রহণ করা। আর তা এমন অসিলা গ্রহণ, যার মধ্যে প্রবেশ করেছে আল্লাহর সাথে শরিক করার মতো বিষয় (অর্থাৎ শির্ক)। যেমন সৎ ব্যক্তিদের কাছে বিপদে সাহায্য প্রার্থনা করা, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের কাছে প্রার্থনা করা। যেমন কেউ কেউ বলে, ‘হে আল্লাহর রসুল, সাহায্য করুন,’ কিংবা বলে, ‘ওহে জিলানি, সাহায্য করুন।’ (২) বিদআতি অসিলা গ্রহণ করা। আর তা এমন পদ্ধতিতে অসিলা গ্রহণ, যে ব্যাপারে শরিয়তের দলিল সাব্যস্ত হয়নি। কেননা অসিলা গ্রহণ করা ইবাদত। শরয়ী দলিল ছাড়া এর কোনোকিছুই বৈধ হবে না। সৎ ব্যক্তিদের সত্তা কিংবা মর্যাদাকে অসিলা হিসেবে গ্রহণ করা বিদআতি অসিলার একটি অন্যতম উদাহরণ। ৭৯. কেয়ামতের দিন যে শাফায়াত (সুপারিশ) করা হবে, সে শাফায়াত বলতে কী বোঝায়? উত্তর: কারও কল্যাণ আনয়ন কিংবা কারও অকল্যাণ প্রতিরোধের জন্য আল্লাহর নিকট মধ্যস্থতা করাকে (intercession) শাফায়াত বলা হয়। ৮০. মৃতদের কাছে কি শাফায়াত চাওয়া যায়? উত্তর: মৃতদের কাছে শাফায়াত চাওয়া যায় না। কারণ শাফায়াতের মালিকানা কেবল এক আল্লাহর। মহান আল্লাহ বলেছেন, قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا “তুমি বল, সকল শাফায়াত আল্লাহর মালিকানাভুক্ত।” [সুরা যুমার: ৪৪] · ৮১. শাফায়াতের শর্ত কী কী? উত্তর: শাফায়াতের শর্ত দুটি। যথা: এক. আল্লাহ কর্তৃক শাফায়াতকারীকে শাফায়াত করার অনুমতি প্রদান। মহান আল্লাহ বলেছেন, مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِه “কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট শাফায়াত করবে?” [সুরা বাকারা: ২৫৫] দুই. যার জন্য শাফায়াত করা হবে, তার প্রতি আল্লাহর সন্তোষ। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ “তিনি যাদের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট, তারা (ফেরেশতারা) শুধু তাদের জন্যই শাফায়াত করে।” [সুরা আম্বিয়া: ২৮] ৮২. কাদের জন্য শাফায়াত করা হবে? উত্তর: তাওহীদপন্থিদের জন্য শাফায়াত করা হবে। এর দলিল—নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ “কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পেয়ে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি, যে একনিষ্ঠচিত্তে (খালেস অন্তরে) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।” [সহিহ বুখারি, হা/৯৯] ৮৩. আল্লাহকে নিয়ে, কিংবা তাঁর কিতাব, বা তাঁর দ্বীন, অথবা তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে যে লোক ঠাট্টাবিদ্রুপ ও পরিহাস করে, তার বিধান কী? উত্তর: এসবের কোনো কিছু নিয়ে যে ঠাট্টা বা উপহাস করে, সে কাফির। মহান আল্লাহ বলেছেন, قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ “বল, আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রসুলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা কোনো ওজর পেশ কোরো না, ইমান আনার পর তোমরা কাফির হয়ে গেছ।” [সুরা তওবা: ৬৫-৬৬] ৮৪. মিত্রতা ও বৈরিতা (الْوَلَاءُ وَالْبَرَاءُ) কাকে বলে? উত্তর: আল্লাহ, তাঁর রসুল ও মুসলিমদের ভালোবাসা এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা তথা সহযোগিতা করাকে মিত্রতা (الْوَلَاءُ) বলে। মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ “তোমাদের মিত্র কেবল আল্লাহ, তাঁর রসুল ও মুমিনগণ, যে মুমিনরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে অবনত হয়। যে ব্যক্তিই আল্লাহ ও তাঁর রসুল এবং মুমিনদেরকে মিত্ররূপে গ্রহণ করবে, (সে হবে আল্লাহর দলভুক্ত) আর আল্লাহর দলই হবে বিজয়ী।” [সুরা মাইদাহ: ৫৫-৫৬] আর কুফর ও কাফিরদের ঘৃণা করা এবং তাদের সাথে শত্রুতা রাখাকে বৈরিতা (َالْبَرَاءُ) বলে। মহান আল্লাহ বলেছেন, قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ “ইবরাহীম ও তার সঙ্গীদের মধ্যে তোমাদের জন্য আছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সঙ্গে, আর তোমরা যাদের ইবাদত করো আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের সঙ্গে—আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের আর তোমাদের মাঝে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ স্পষ্ট হয়ে গেছে, যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ইমান আনছ (ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে এ বিদ্বেষ)।” [সুরা মুমতাহানাহ: ৪] ৮৫. কাফিরদের উৎসব—যেমন ক্রিসমাস ডে—উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা বা সম্ভাষণ জানানোর বিধান কী? উত্তর: শাইখ ইবনু উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “কাফিরদেরকে ক্রিসমাস ডে (যিশুখ্রিষ্ট দিবস) কিংবা তাদের অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। এ বিষয়ে ইজমা (মতৈক্য) বর্ণনা করেছেন ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘আহকামু আহলিয যিম্মাহ’ গ্রন্থে।” [ফাতাওয়া ইবনি উসাইমীন, ৩/৪৪] · ৮৬. বিদআত কাকে বলে? উত্তর: আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম যে পদ্ধতি বা আদর্শের ওপর ছিলেন না, সে পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত করাকে বিদআত বলে। ৮৭. দ্বীনের মধ্যে বিদআত করার হুকুম কী? উত্তর: হারাম। এটা সবচেয়ে গর্হিত পাপগুলোর একটি। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ “নিশ্চয় সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মাদের আদর্শ। সর্বনিকৃষ্ট কর্ম নবউদ্ভাবিত বিষয়সমূহ। আর প্রত্যেক বিদআতই (নবউদ্ভাবিত কর্ম) ভ্রষ্টতা।” [সহিহ মুসলিম, হা/৮৬৭; জুমুআহ অধ্যায় (৮); পরিচ্ছেদ: ১৩] ৮৮. ইসলামে কি বিদআতে হাসানাহ তথা ভালো বিদআত বলে কিছু আছে? উত্তর: ইসলামে কোনো বিদআতে হাসানাহ তথা ভালো বিদআত নেই। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, َكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ “প্রত্যেক বিদআতই (নবউদ্ভাবিত কর্ম) ভ্রষ্টতা।” [সহিহ মুসলিম, হা/৮৬৭] ৮৯. বিদআতিদের ব্যাপারে (সুন্নাহপন্থির) অবস্থান কী হবে? উত্তর: বিদআতিদের থেকে সতর্ক থাকা, তাদের থেকে মানুষকে সতর্ক করা, তাদের সাথে ওঠাবসা না করা এবং তাদের বইপুস্তক না পড়া (একজন সুন্নাহপন্থির) কর্তব্য। ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, “তুমি বিদআতিদের সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা তাদের সাথে কৃত ওঠাবসা অন্তরে ব্যাধি আনয়ন করে।” [আল-ইবানাহ, ২/৪৩৮] ইমাম বাগাউয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “সাহাবিবর্গ, তাবেয়িগণ, তাঁদের অনুসারীবৃন্দ ও সুন্নাহর উলামাগণ বিদআতিদের প্রতি বৈরিতা রাখা এবং তাদেরকে বর্জন করার ওপর একমত ছিলেন।” [শারহুস সুন্নাহ, ১/১২৭] ৯০. নামাজ পরিত্যাগ করার বিধান কী? উত্তর: নামাজ পরিত্যাগ করা কুফর। কারণ জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ “নিশ্চয় বান্দার মাঝে ও শির্ক-কুফরের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ পরিত্যাগ করা।” [সহিহ মুসলিম, হা/৮২; ইমান অধ্যায় (১); পরিচ্ছেদ: ৩৫] · ৯১. অন্যায়ভাবে মুসলিমদের কাফির বলার বিধান কী? উত্তর: হারাম। এটা চরম পর্যায়ের গুনাহগুলোর একটি। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, أَيُّمَا امْرِئٍ قَالَ لأَخِيهِ يَا كَافِرُ، فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا إِنْ كَانَ كَمَا قَالَ وَإِلاَّ رَجَعَتْ عَلَيْهِ “যে লোকই তার ভাইকে বলে, ‘হে কাফির,’ সেই কথা তাদের দুজনের যে কোনো একজনের দিকে ফিরে যায়। আখ্যাত ব্যক্তি যদি আসলেই তেমন হয়ে থাকে (তাহলে তো কথাটা তার দিকেই গেল), নচেৎ উক্ত কথা কথকের দিকেই ফিরে আসে।” [সহিহ মুসলিম, হা/৬০; ইমান অধ্যায় (১); পরিচ্ছেদ: ২৬] ৯২. আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিবর্গের ব্যাপারে একজন মুসলিমের কর্তব্য কী হবে? উত্তর: তাঁদেরকে ভালোবাসা, এ বিশ্বাস রাখা যে, নবি ও রসুলগণ আলাইহিমুস সালামের পরে তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, ভালো কথা ছাড়া তাদের ব্যাপারে আলোচনা করা থেকে জবানকে সংযত করা একজন মুসলিমের কর্তব্য। কোনো একজন সাহাবিকেও গালি দেওয়া হারাম। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ “তোমরা আমার সাহাবিদের গালি দিয়ো না। ওই সত্তার কসম, যাঁর হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি এক উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা দান করে, তবুও তা তাদের কারও এক মুদ (মধ্যম মাপের দু হাতের এক অঞ্জলি পরিমাণ) বা তার অর্ধেক পরিমাণ দানের সমপর্যায়ে পৌঁছবে না।” [সহিহ বুখারি, হা/৩৬৭৩; সহিহ মুসলিম, হা/২৫৪০] ৯৩. সাহাবিগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুমের মর্যাদা সম্পর্কে দলিল উল্লেখ করো। উত্তর: মহান আল্লাহ বলেছেন, وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ “মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী, আর যারা তাদের যথাযথ অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর তারাও হয়েছে তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।” [সুরা তওবা: ১০০] ৯৪. সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবি কারা? উত্তর: সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবি চার খলিফা। তাঁরা হলেন আবু বকর আস-সিদ্দিক, তারপর উমার বিন খাত্তাব, তারপর উসমান বিন আফফান, তারপর আলি বিন আবু তালিব। তারপর জান্নাতের দশজন সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিগণের অবশিষ্ট সাহাবিবর্গ রাদিয়াল্লাহু আনহুম। ৯৫. উলুল আমর (কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ) বলতে কারা উদ্দেশ্য? উত্তর: তারা মুসলিমদের শাসক। ৯৬. মুসলিমদের শাসকবর্গের ব্যাপারে একজন মুসলিমের কর্তব্য কী? উত্তর: আল্লাহর অবাধ্যতা ছাড়া বাকি সবক্ষেত্রে তাদের কথা শোনা ও মানা, তাদেরকে নসিহত করা, তাদের জন্য দোয়া করা এবং মিম্বার ও মজলিসগুলোতে তাদের নিন্দা-সমালোচনায় লিপ্ত না হওয়া। কারণ তা ফিতনা তৈরি করে। ৯৭. এর দলিল কী? উত্তর: মহান আল্লাহর বাণী, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ “হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রসুলের এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের।” [সূরাহ নিসা: ৫৯] রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, الدِّينُ النَّصِيحَةُ. قُلْنَا لِمَنْ قَالَ : لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ “সদুপদেশ দেওয়াই দ্বীন। আমরা বললাম, কার জন্য উপদেশ? তিনি বললেন, আল্লাহ, তাঁর কিতাব, ও তাঁর রসুলের জন্য এবং মুসলিম শাসকবর্গ ও তাদের জনগণের জন্য।” [সহিহ মুসলিম, হা/৫৫; ইমান অধ্যায় (১); পরিচ্ছেদ: ২৩] ৯৮. মুসলিম শাসকদের প্রতি নসিহত কীরূপ হবে? উত্তর: নসিহত করতে হবে গোপনে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْصَحَ لِذِي سُلْطَانٍ فَلا يُبْدِهِ عَلانِيَةً وَلَكِنْ يَأْخُذُ بِيَدِهِ فَيَخْلُوا بِهِ فَإِنْ قَبِلَ مِنْهُ فَذَاكَ وَإِلا كَانَ قَدْ أَدَّى الَّذِي عَلَيْهِ “যে ব্যক্তি শাসককে উপদেশ দিতে চায়, সে যেন তা প্রকাশ্যে ব্যক্ত না করে। বরং সে তাঁর হাত ধরবে, তারপর তাঁর সাথে একান্তে মিলিত হয়ে উপদেশ দিবে। যদি তিনি তা গ্রহণ করেন, তবে ভালো। আর না গ্রহণ করলে, তার ওপর যে দায়িত্ব ছিল, সে তা পালন করল।” [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩৬৯, যিলালুল জান্নাহ, হা/১০৯৬; সনদ: সহিহ (তাহকিক: আলবানি ও ইবনু বায)] ৯৯. ফিতনা অবতীর্ণের সময় মুসলিমের কর্তব্য কী, তা দলিল-সহ আলোকপাত করো। উত্তর: ফিতনা থেকে দূরে থাকা, মুসলিমদের জামাআত ও তাদের নেতাকে আঁকড়ে ধরা এবং গভীর জ্ঞানসম্পন্ন আলিমদেরকে করণীয় জিজ্ঞাসা করা অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। এর দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا “আর যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা কিংবা ভীতিজনক কোনো বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। তারা যদি সেটা রসুলের কাছে এবং তাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছে পৌঁছে দিত, তাহলে অবশ্যই অনুসন্ধানকারীরা তা (সরাসরি) জেনে নিত তাদেরই নিকট থেকে। আর যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না থাকত, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানেরই অনুসরণ করতে।” [সুরা নিসা: ৮৩] ১০০. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত কারা? উত্তর: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবিবর্গ ও তাঁদের অনুসারীগণের আদর্শকে যারা আঁকড়ে ধরে এবং বিশ্বাস, কথা ও কাজে তাঁদেরই পথ অবলম্বন করে, তারাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত। মহান আল্লাহ আমাদের নবি মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারপরিজন ও সাহাবিগণের ওপর বর্ষণ করুন সালাত ও সালাম। · সমাপ্ত, আলহামদুলিল্লাহ · সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে [হতে সংগৃহীত]
Comments