▌প্রশ্নঃ দ্ব'ঈফ তথা দূর্বল হাদিস কি গ্রহণযোগ্য?
- AL-INABAH ACADEMY
- Feb 2, 2022
- 4 min read
▌উত্তরঃ জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকটে যয়িফ হাদিস গ্রহণযোগ্য না।যে ৫ থেকে ৬ জন শুধু ফজিলতের ক্ষেত্রে যয়িফ হাদিসকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন তারাও অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।তবে যেহেতু তা জমহুর ও মুতাকাদ্দিমিনদের উসুলের সরাসরি বিরুদ্ধে অতএব মুহাদ্দিসগণের বুনিয়াদী উসুলের ভিত্তিতে তা মারদূদ বলে গণ্য হবে।যয়িফ হাদিস গ্রহণযোগ্য না হওয়ার ব্যাপারে বড় বড় ইমামগণ অনেকেই অনেক বই লিখে গিয়েছেন।আর এটা অনেক বড় বিষয়ও।তাই খুব সংক্ষেপে কিছু কথা বলার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ। যয়িফ হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে জমহুর মুহাদ্দিসিন একেরাম একমত।সময় সল্পতার কারণে নিচে কয়েকজনের মতামত নিয়ে আলোচনা করছি ইনশাআল্লাহ।
প্রমাণ১ঃ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস আশ শাফে'য়ী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “দ্বঈফ সানাদের বর্ণনা (দ্বঈফ হাদিস) দিয়ে হুজ্জাত (দলীল) ক্বায়িম (প্রতিষ্ঠিত) হয় না।”
(জামি' আত তিরমিযী, হা/৯৩১)
প্রমাণ২ঃ ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ
(ইমাম আহমেদসহ প্রমুখকে)বললেনঃ
"যখন তোমাদের নিকট রাসূলূল্লাহ ﷺ এর হাদীস সহীহ সাবিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা আমাকে তা জানিয়ে দিও, যাতে আমি সেটাকে নিজের মত-ফতোয়া হিসেবে ঘোষনা দিতে পারি। যদিও সেই হাদীসটা যেই এলাকারই হোক।"
[হিলয়াতুল আউলিয়াঃ ৯/১০৬, সনদ সহীহ]
প্রমাণ৩ঃ ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
’’وکذلک نحن لا نقبل خبر من جھلناہ، وکذلک لا نقبل خبرمن لم نعرفہ بالصدق وعمل الخیر‘‘
"আর এইভাবে আমরা যাকে মাজহুল মনে করি তার (বর্ণনাকৃত) হাদীস আমরা মানি না। আর এইভাবে যাকে আমরা সত্যবাদী এবং নেক আমলকারী হিসেবে না পাই, তাহলে তার (বর্ণনাকৃত) হাদীসও কবুল করি না।"
[ইকতিলাফুল হাদীস কিতাবু ইমামুশ-শাফেয়ীঃ ১৭১৭ পৃষ্টা, বাবঃ ১ম]
প্রমাণ-১ঃ سمعت أحمد بن الحسن يقول كنا عند أحمد بن حنبل فذكروا على من تجب الجمعة فلم يذكر أحمد فيه عن النبي صلى الله عليه وسلم شيئا قال أحمد بن الحسن فقلت لأحمد بن حنبل فيه عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم فقال أحمد عن النبي صلى الله عليه وسلم قلت نعم قال أحمد بن الحسن حدثنا حجاج بن نصير حدثنا معارك بن عباد عن عبد الله بن سعيد المقبري عن أبيه عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال " الجمعة على من آواه الليل إلى أهله قال فغضب علي أحمد بن حنبل وقال لي استغفر ربك استغفر ربك قال أبو عيسى إنما فعل أحمد ابن حنبل هذا لأنه لم يعد هذا الحديث شيئا وضعفه لحال إسناده. ➧ ইমাম তিরমিযী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আহমাদ ইবনুল হাসানকে বলতে শুনেছিঃ আমরা আহমাদ ইবনু হাম্বলের নিকট উপস্থিত ছিলাম। কার উপর জুমু'আ ওয়াজিব এ নিয়ে আলোচনা জমে উঠল। আহমাদ ইবনু হাম্বল এ বিষয়ের উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন হাদীস উল্লেখ করেননি। আহমাদ ইবনু হাসান বলেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বলকে বললাম, আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু) এ প্রসঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস! আমি বললাম, হ্যাঁ। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি রাত হতে হতে বাড়ি পৌছতে পারবে তার উপরও জুমুআ ওয়াজিব।” "এ হাদীস শুনে আহমাদ ইবনু হাম্বল আমার উপর রেগে গেলেন এবং বললেন, তুমি তোমার আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাও, তুমি তোমার আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাও।" ইমাম তিরমিযী বলেনঃ “ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল একথা এজন্যই বলেছেন, তিনি এ হাদীসকে গণনায় ধরেন না। কেননা এই হাদিসের সানাদ দ্বঈফ (দূর্বল)।” [দেখুন: জামে' তিরমিযী,হা/৫০২] প্রমাণ-২ঃইমাম তিরমিযী তার 'আল ইলালুস স্বগীর' গ্রন্থেও ওই বর্ণনাটি নিয়ে এসেছেন। তিনি বর্ণনার শেষে বলেন, قَالَ” فَغَضب أَحْمد بن حَنْبَل وَقَالَ اسْتغْفر رَبك اسْتغْفر رَبك مرَّتَيْنِ وَإِنَّمَا فعل هَذَا أَحْمد بن حَنْبَل لِأَنَّهُ لم يصدق هَذَا عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لضعف إِسْنَاده لِأَنَّهُ لم يعرفهُ عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم“ "এ হাদীস শুনার পর আহমাদ ইবনে হাম্বল আমার (আহমাদ ইবনুল হাসানের) উপর রেগে গেলেন এবং বললেন,তুমি তোমার আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাও, তুমি তোমার আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাও।" ইমাম তিরমিযী বলেন, “ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল এরূপ এজন্যই করেছেন, কেননা এই হাদিস রাসূল ﷺ থেকে সত্যসূত্রে বর্ণিত হয় নি। এই হাদিসের সানাদ দ্বঈফ (দূর্বল)। রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এই হাদিস পরিচিত নয়।" (দেখুন: আল 'ইলালুস স্বগীর,১/৭৩৯; শামেলা ভার্শন)
ইমাম বুখারি রহিমাহুল্লাহঃ
প্রমাণঃ ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ (১৯৪-২৫৬ হি.) যঈফ হাদীছকে সম্পূর্ণরূপেই প্রত্যাখ্যান করেছেন তা তাঁর ছহীহ বুখারীর সংকলন, রাবীদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন এবং কোন প্রকার যঈফ হাদীছকে প্রশ্রয় না দেয়া থেকেই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় (আল-হাদীছুয যঈফ ওয়া হুকমুল ইহতিজাজু বিহী, পৃ. ১৩০)
প্রমাণঃ ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ সহিহ মুসলিমে অধ্যায় রচনা করেন:
باب النَّهْىِ عَنِ الرِّوَايَةِ، عَنِ الضُّعَفَاءِ، وَالاِحْتِيَاطِ، فِي تَحَمُّلِهَا
দ্ব’ঈফ রাবীর হাদীস বর্ণনা করা নিষিদ্ধ এবং হাদীস সংগ্রহের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা।
এছাড়াও যঈফ হাদীছ বর্জন সংক্রান্ত ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ (২০৪-২৬১ হি.)-এর বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন। তিনি তাঁর ‘ছহীহ মুসলিম’-এর’ ভূমিকাতেই তা আলোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্যের প্রমাণে হাদীছ উল্লেখ করেছেন এবং ছাহাবী, তাবেঈ ও মুহাদ্দিছগণের মতামত পেশ করেছেন [ছহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬, অনুচ্ছেদ-১, মুক্বাদ্দামাহ দ্র.]
সাঈদ বিন ইব্রাহীম রহিমাহুল্লাহঃ
প্রমাণঃ মিস’আর বলেন, সাঈদ ইবনু ইবরাহীম বলেন:
নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস কেউ বর্ণনা করবে না।
[আদ দারিমী হা/৪২৯.সহিহ]
প্রমাণঃ ইবনু আউন মুহাম্মদ (ইবনু সীরীন) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
এ ইলমই (হাদীসের সনদ সম্পর্কিত জ্ঞান) হলো দীন।
সুতরাং কোনো লোক যেনো লক্ষ্য করে কার নিকট হতে সে তার দীন গ্রহণ করছে।
[আদ দারিমী হা/৪৩৩. সহিহ]
প্রমাণঃআবূ বকর ইবনুল আরাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যঈফ হাদীছের উপর একেবারেই আমল করা যাবে না; তা ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে হোক বা অন্য কোন ক্ষেত্রে হোক (তাদরীবুর রাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৫২, আল নুকাত লিল যারকাশীঃ২/৩১০)
প্রমাণঃ আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, وَهَذَا وَالَّذِىْ أُدَيِّنُ اللهَ بِهِ وَأَدْعُوْ النَّاسَ إِلَيْهِ أَنَّ الْحَدِيْثَ الضَّعِيْفَ لاَ يُعْمَلُ بِهِ مُطْلَقًا لاَفِىْ الْفَضَائِلِ وَالْمُسْتَحَبَّاتِ وَلاَ فِىْ غَيْرِهِمَا. ‘এ জন্যই আমি আল্লাহর দিকে ফিরে যাই এবং মানুষকেও এদিকেই আহ্বান করি যে, যঈফ হাদীছের উপর কোন ক্ষেত্রেই আমল করা যায় না। না ফযীলতের ক্ষেত্রে, না মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে। এতদ্ব্যতীত অন্য কোন বিষয়েও না’ (ছহীহুল জামে‘ আছ-ছগীর ওয়া যিয়াদাতুহু, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫, ৫০) উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে যয়িফ হাদিস গ্রহণ করা যাবেনা। (সংগৃহীত)
Comments